বেদ কয় প্রকার ও কি কি? - বিস্তারিত জানুন

বেদ চার ভাগে বিভক্ত, যথা: ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব। প্রতিটি বেদ আবার চার ভাগে বিভক্ত, যথা: সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ।

বেদ কয় প্রকার ও কি কি?
বেদ কয় প্রকার ও কি কি?

বৈদিক সাহিত্যের শ্রেণীবিভাগ

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস তথা আর্থসামাজিক জীবনের প্রতিচ্ছবি যেসব গ্ৰন্থ থেকে পাওয়া যায়, বৈদিক সাহিত্য তার মধ্যে অগ্রগণ্য। বৈদিক সাহিত্যকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়, যথা: বেদবেদাঙ্গ। ভারতে আর্যদের বসতি স্থাপনের প্রথম যুগে বেদ রচিত হয় ও পরবর্তীকালে বেদাঙ্গ রচিত হয়। বেদ চার ভাগে বিভক্ত, যথা: ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব। প্রতিটি বেদ আবার চার ভাগে বিভক্ত, যথা: সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ।

[১] বেদের সংহিতা অংশ পদ্যে লেখা। সংহিতায় স্তব-স্তুতিনানান মন্ত্র সন্নিবিষ্ট আছে। ঋকবেদ সংহিতায় ১০২৮টি সূত্র আছে। সাম, যজুঅথর্ব বেদের সংহিতাগুলির অধিকাংশই ঋকবেদ সংহিতা থেকে নেওয়া। সমস্ত বেদের মধ্যে ঋকবেদ বয়সে সবচেয়ে প্রাচীন

[২] যাগ-যজ্ঞের সময় সামবেদের স্তোত্রগুলিকে গানের মতো আবৃত্তি করা হত। এজন্য একে 'সামগান' বলা হয়। যজুর্বেদে যাগ-যজ্ঞমন্ত্রতন্ত্রের কথা পাওয়া যায়। যজুর্বেদ আংশিক পদ্যে ও আংশিক গদ্যে লেখা। অথর্ব বেদ অনেক পরের রচনা। অথর্ব বেদ সংহিতায় দেবতাদের স্তব-স্তুতি ছাড়াও নানান রহস্যজনক বিদ্যাও (যেমন: বশীকরণ, মারণ, উচাটন প্রভৃতি) সন্নিবিষ্ট আছে।

[৩] বেদের ব্রাহ্মণ অংশ গদ্যে লেখা। এতে বৈদিক মন্ত্রগুলির টীকা ও যাগযজ্ঞের বিধিগুলি সন্নিবিষ্ট আছে। বেদের অপর দুই অংশ আরণ্যক ও উপনিষদ হল বেদের দার্শনিক বিভাগ। যাঁরা বৃদ্ধ বয়সে সংসারধর্ম ত্যাগ করে অরণ্যবাসী হতেন, তাঁদের জন্য ধর্মতত্ত্বের আলোচনা আছে আরণ্যকে। হিন্দু সমাজের উৎপত্তি ও তার গঠন সম্বন্ধে ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপনিষদগুলি বেদের শেষ অংশে বিন্যস্ত হওয়ায় উপনিষদের অপর নাম বেদান্ত। উপনিষদে হিন্দুদের কর্ম, মায়া, মুক্তি প্রভৃতি বিষয়ের বিস্তৃত আলোচনা আছে; এছাড়া বেদের এই অংশে (উপনিষদে) জীব এবং ব্রহ্ম, আত্মাপরমাত্মা প্রভৃতি বিষয়েরও আলোচনা আছে। উপনিষদে হিন্দু দর্শনশাস্ত্রকে বেশ উন্নত অবস্থায় দেখা যায়।

[৪] চতুর্বেদ ছাড়াও বেদাঙ্গ অথবা সূত্রও হল বৈদিক সাহিত্যের অঙ্গ। বেদাঙ্গের ছয়টি ভাগ, যথা — (i) শিক্ষা (এই শাস্ত্রের সাহায্যে বিশুদ্ধভাবে উচ্চারণ করে বেদ পাঠ করা হত), (ii) ছন্দ (এতে বেদের পদবিন্যাসের আলোচনা আছে), (iii) ব্যাকরণ ও (iv) নিরুক্তি (এই দুইটি ভাগে বৈদিক সাহিত্যে উল্লিখিত শব্দগুলির আলোচনা করা আছে), (v) জ্যোতিষ ও (vi) কল্প (এই শাস্ত্র দুটিতে বৈদিক ধর্মের বিধান ও নক্ষত্রের অবস্থানের আলোচনা আছে)।

[৫] বৈদিক যুগের দর্শন সাহিত্য ছয়টি ভাগে বিভক্ত, যেমন — সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, পূর্ব- মীমাংসা ও উত্তর-মীমাংসা। কপিল, পতঞ্জলি, গৌতম, কণাদ, জৈমিনি ও ব্যাস প্রমুখ ঋষিরা যথাক্রমে এই 'ষড়দর্শনের'র রচয়িতা। ধর্মসূত্র বলতে বৌধায়ন, আপস্তম্ব ও বশিষ্ঠের রচনা বোঝায়। যুগে যুগে ধর্মসূত্র লেখা হয়। ধর্মসূত্রে হিন্দু সমাজের রীতিনীতি, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন প্রভৃতি বিষয়ের আলোচনা আছে। হিন্দু সমাজের বিবর্তনের ক্ষেত্রে ধর্মসূত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর

1. আর্যদের প্রাচীনতম গ্রন্থ কি?
উত্তর: আর্যদের প্রাচীনতম গ্রন্থের নাম ঋকবেদ।

2. বেদকে শ্রুতি বলা হয় কেন?
উত্তর: আক্ষরিক অর্থে লিখিত হওয়ার বহু আগে থেকেই বেদ মুখে মুখে উচ্চারিত হত। প্রাচীনকালে আর্য ঋষিরা মুখে মুখে বেদ রচনা করতেন এবং গুরুর কাছ থেকে শিষ্যরা তা শুনে মুখস্ত করে নিতেন—এই জন্য বেদের অপর নাম শ্রুতি।

3. উপনিষদকে 'বেদান্ত' বলা হয় কেন?
উত্তর: চার বেদের (ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব) প্রতিটি বেদ আবার চার ভাগে বিভক্ত, যেমন সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ। অর্থাৎ বেদের শেষতম অংশ হল উপনিষদ (যা বেদের 'অন্তে' অবস্থিত)‌। প্রতিটি বেদের শেষ ভাগে বিন্যস্ত থাকায় উপনিষদকে 'বেদান্ত' বলা হয়।

আরও জানুন :

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال