জৈনধর্ম সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
1. জৈনদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম কি?
উত্তর: দ্বাদশ অঙ্গ।
2. জৈন ধর্মের মূলনীতি কি?
উত্তর: অহিংসা।
3. প্রথম জৈন শাস্ত্র গ্রন্থের নাম কি?
উত্তর: জৈন শ্রমন ভদ্রবাহু রচিত কল্পসূত্র।
4. তীর্থঙ্কর শব্দের অর্থ কি?
উত্তর: জৈনদের প্রধান ধর্মগুরু।
5. জৈনদের সর্বপ্রথম তীর্থঙ্করের নাম কি?
উত্তর: ঋষভদেব বা আদিনাথ।
6. জৈনদের ২৩-তম তীর্থঙ্করের নাম কি?
উত্তর: পার্শ্বনাথ।
7. জৈনদের শেষ তীর্থঙ্কর কে ছিলেন?
উত্তর: মহাবীর (চব্বিশতম তীর্থঙ্কর)।
8. জৈনদের দুটি প্রধান সম্প্রদায় কি কি?
উত্তর: শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর।
9. জৈনধর্মের মূলকথা কী?
অথবা, জৈনধর্মে 'পঞ্চমহাব্রত' কী?
উত্তর: জৈনধর্মের মূল কথা হল অহিংসা। পার্শ্বনাথ প্রবর্তিত চতুর্যাম নীতি [ যথা : অহিংসা, সত্য, অচৌর্য (চুরি না করা) ও অপরিগ্রহ (বিষয় সম্পত্তি থেকে মুক্ত থাকা)] এবং মহাবীর প্রবর্তিত ব্রহ্মচর্য মোট এই পাঁচটি নীতিকে একসঙ্গ্যে 'পঞ্চমহাব্রত' বলা হয়, যা জৈনধর্মের মূলভিত্তি।
10. কারা তীর্থঙ্কর নামে পরিচিত? জৈনধর্মের প্রথম ও শেষ তীর্থঙ্কর কে?
উত্তর: মহাবীরকে জৈনধর্মের প্রবর্তক বলে মনে করা হলেও, জৈনরা মনে করেন যে, তাঁর আগেও তেইশজন তীর্থঙ্কর অর্থাৎ মুক্তির পথপ্রদর্শক জৈনধর্মকে পুষ্ট করেছিলেন। সর্বপ্রথম তীর্থঙ্কর ছিলেন ঋষভদেব বা আদিনাথ এবং মহাবীর ছিলেন ২৪-তম তথা সর্বশেষ তীর্থঙ্কর।
11. জৈন ধর্মের 'চতুর্যাম নীতি' কী?
উত্তর: জৈন ধর্মের প্রবক্তা পার্শ্বনাথ যে চারটি শিক্ষা দিয়েছিলেন তা 'চতুর্যাম' নামে পরিচিত। এগুলি হল— (i) হিংসা করো না, (ii) মিথ্যা কথা বোলো না, (iii) চুরি নিন্দনীয় এবং (iv) সম্পত্তি অর্জন করবে না।
এই চারটি শিক্ষার সঙ্গে মহাবীর ব্রহ্মচর্য পালনের নির্দেশ সংযোজন করেছিলেন।
12. দ্বাদশ অঙ্গ কী?
উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে পাটলিপুত্রে এক ধর্ম সম্মেলনে জৈনধর্মের প্রবর্তক মহাবীরের অনুগামীরা তাঁর উপদেশ বারোটি খণ্ডে লিপিবদ্ধ করেন, এগুলি 'দ্বাদশ অঙ্গ' নামে পরিচিত।
13. জৈন মতে কীভাবে আত্মার চরম মুক্তি লাভ সম্ভব?
অথবা, জৈনধর্মে 'ত্রিরত্ন' বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: জৈনধর্মের মতে, মানুষের (i) সত্য বিশ্বাস, (ii) সত্য জ্ঞান এবং (iii) সত্য আচরণ—এই তিনটি গুণ হল মানুষের ত্রিরত্ন। এই তিনটি গুণ বা ত্রিরত্নের সাহায্যে সিদ্ধশিলা বা আত্মার চরম মুক্তি বা পরম আনন্দলাভ করা যায়।
14. প্রাচীন ভারতে জৈনধর্মের উত্থান ও অবনতি কীভাবে হয়েছিল?
উত্তর: খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত সময়ে একদিকে যেমন জৈনধর্ম
দুটি প্রধান শাখায় বিভক্ত হয়ে যায় (যেমন: শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর), অন্যদিকে এই ধর্মমত ভারতের প্রায় সর্বত্র দৃঢ়ভাবে প্রসারিত হয় (উত্তর ভারতের মগধ, উজ্জয়িনী, মথুরা, মালব থেকে তামিলনাডুসহ দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে)। কালক্রমে হিন্দুধর্মের পুনরুত্থান ও রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ভারতে বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে সঙ্গে, জৈন ধর্মেরও অবনতি শুরু হয়।