ভারতের জনজীবনে হিমালয় পর্বতের প্রভাব
প্রশ্ন: ভারতকে হিমালয়ের দান বলা হয় কেন?
অথবা, ভারতের জনজীবনে হিমালয় পর্বতের প্রভাব উল্লেখ করো।
উত্তর: ভারতবর্ষকে বা ভারতকে হিমালয়ের দান বলার অনেকগুলি কারণ রয়েছে, যেমন —
(i) উত্তর-পূর্ব থেকে উত্তর-পশ্চিমে অর্ধচন্দ্রকারে প্রায় 2,500 কিলোমিটার দীর্ঘ অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালা ভারতের উত্তর সীমান্তে দুর্ভেদ্য প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে থেকে ভারতীয় উপমহাদেশকে মধ্য এশিয়ার হাড়কাঁপানো শীতের হাত থেকেও রক্ষা করেছে।
(ii) এই পর্বতের সুউচ্চ প্রাচীর দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুকে ভারতবর্ষে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করেছে। অন্যদিকে হিমালয় থেকে নির্গত নদীগুলির কল্যাণে ভারত হয়ে উঠেছে সুজলা-সুফলা শস্য-শ্যামলা।
(iii) বহিঃশত্রুর হাত থেকে ভারতবর্ষকে অনেকাংশে রক্ষা করে হিমালয় যে দুর্জয় ব্যবধানের প্রাচীর গড়ে তুলেছে, তার ফলে ভারত বহির্জগৎ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজস্ব সভ্যতা ও সংস্কৃতি গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছে — ভারতবর্ষকে তাই 'হিমালয়ের দান' বলা হয়।
(iv) হিমালয় পর্বতের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত খাইবার পাস, জোজিলা পাস, নাথুলা পাস প্রভৃতি গিরিপথগুলো দিয়েই যুগে যুগে আর্য, গ্রিক, শক, হুন, তুর্কি, মুঘল প্রভৃতি জাতি ভারতে প্রবেশ করেছে।
সাম্রাজ্য বিস্তার ও লুটপাটের তৃপ্তিহীন তারনায় হিমালয়ের গিরিবর্ত বেয়ে নেমে আসা এই সমস্ত দুঃসাহসী বিদেশি আক্রমণকারীর দল একদিকে ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অশান্তি ও অত্যাচারের আগুন জ্বালিয়েছে, অন্যদিকে তারা বহির্বিশ্বের সঙ্গে মৈত্রী-স্থাপনেও সাহায্য করেছে। হিমালয়ের এই সমস্ত গিরিপথ দিয়ে শুধুমাত্র বিদেশি যোদ্ধার দলই আসেনি, — এসেছে বণিক, ধর্মপ্রচারক ও তীর্থযাত্রীর দল। যুগে যুগে ভারতে আগত বিদেশির দল ভারতীয় সভ্যতায় নিজেদের বিলীন করে ঐতিহ্যপূর্ণ এই সভ্যতাকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলেছে।
এই সকল কারণগুলির জন্য ঐতিহাসিক কে. এম. পনিক্কর তাঁর 'A Survey of Indian History' গ্রন্থতে 'ভারতবর্ষকে হিমালয়ের দান' বলেছেন।
*গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: ভারতবর্ষকে হিমালয়ের দান কে বলেছেন?
উত্তর: ঐতিহাসিক কে. এম. পনিক্কর।
আরও পড়ুন: