হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা কেমন ছিল?

হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা কেমন ছিল?
হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা

প্রশ্ন: হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা কেমন ছিল?
অথবা, হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনার বিবরণ দাও।


উত্তর: হরপ্পা সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল যে, এটি ছিল এক অতি উন্নত নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। মহেঞ্জোদারো, হরপ্পা, কালিবানলোথাল এইসব নগরগুলি ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত।

হরপ্পা সভ্যতার নগর পরিকল্পনা


প্রধান নগর পরিকল্পনা :

হরপ্পা সভ্যতার প্রধান দুটি কেন্দ্রের একটি হল হরপ্পা (পাকিস্তানের পাঞ্জাব রাজ্যের মন্টোগোমারী জেলার অন্তর্গত), অপরটি হল মহেঞ্জোদারো (পাকিস্তানের সিন্ধুরাজ্যের লারকানা জেলার অন্তর্গত)। প্রধান দুটি নগরের পরিকল্পনা প্রায় একই ধরনের ছিল। নগর পরিকল্পনার দুটি প্রধান দিক হল যে, প্রত্যেকটি নগর দুর্গ দ্বারা বেষ্টিত ছিল। উঁচু ঢিপির ওপর দুর্গ নির্মাণ করা হত। শাসকশ্রেণির লোকেরা দুর্গের অভ্যন্তরে বসবাস করতেন, আর নগর দুর্গের নীচে অবস্থিত উপনগরীতে ছিল সাধারণ মানুষের বসবাস।

রাস্তাঘাট :

দুর্গের নীচে প্রায় দেড় কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে প্রকৃত শহর বিস্তৃত ছিল। প্রতিটি শহর তার চারদিকের প্রশস্ত রাজপথ দ্বারা কয়েকটি অংশে বিভক্ত ছিল। ৩ মিটার থেকে ১০ মিটার চওড়া এইসব রাজপথগুলো উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমে সমান্তরালভাবে বিস্তৃত ছিল। গলিপথগুলি ছিল বড়ো রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত।

বসতবাড়ি :

গলিগুলির দু'পাশে বসতবাড়ির অবস্থান ছিল। মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পা এই দুটি নগরের কোনোটিতেই পাথরের তৈরি বাড়ির নিদর্শন পাওয়া যায়নি। বাড়িগুলির অধিকাংশই পোড়া ইট দিয়ে তৈরি হত। প্রতিটি বাড়িতে খোলা উঠোন, স্নানঘর, কুয়া, সিঁড়ি ও নর্দমার ব্যবস্থা ছিল। সাধারণত এই সমস্ত বাড়িগুলি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা থাকত।

পয়ঃপ্রণালী ও জলনিকাশী ব্যবস্থা :

হরপ্পা সভ্যতার নগরগুলোতে বাড়ির ভেতর থেকে জলনিকাশের জন্য নর্দমা থাকত। এই নর্দমাগুলো সদর রাস্তার বাঁধানো বড়ো নর্দমার সঙ্গে যুক্ত থাকত। এই সভ্যতার জলনিকাশী ব্যবস্থা ছিল সত্যিই চমকপ্রদ। এই জন্য অধ্যাপক ব্যাসাম যথার্থই বলেছেন যে, বিশ্বের আর কোনো দেশে এইরকম জলনিকাশী ব্যবস্থার নিদর্শন পাওয়া যায়নি। হরপ্পা সভ্যতার শহরগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ডাস্টবিন ও ম্যানহোল ব্যবস্থার প্রচলন ছিল। স্বভাবতই এ থেকে উপলব্ধি করা যায় যে, সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীগণ স্বাস্থ্য সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন।

স্নানাগার ও শস্যাগার :

হরপ্পা সভ্যতার নির্মাণশৈলীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল মহেঞ্জোদারোর স্নানাগারহরপ্পার শস্যাগার। মহেঞ্জোদারোর বিশালাকার স্নানাগারটির আয়তন ছিল ১৮০×১০৮ ফুট, স্নানাগারের অভ্যন্তরে অবস্থিত জলাশয়ের আয়তন ছিল দৈর্ঘ্যে ৩৯ ফুট, প্রস্থে ২৩ ফুট এবং গভীরতায় ৮ ফুট। হরপ্পায় যে শস্যাগারের নিদর্শন পাওয়া গেছে তার আয়তন ছিল দৈর্ঘ্যে ১৬৯ ফুট ও প্রস্থে ১৩৫ ফুট। অধ্যাপক ব্যাসাম হরপ্পার শস্যাগারটিকে 'রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্ক' এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। অধ্যাপক হুইলারের মতে, 'খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর আগে পৃথিবীর আর কোথাও এই ধরনের শস্যাগার ছিল না।'

কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠীর অস্তিত্ব :

সিন্ধু সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শন ও উন্নত নগর পরিকল্পনা থেকে বলা যেতে পারে যে, নগরগুলিতে কড়া পৌরশাসন ছিল। তবে এই শাসনব্যবস্থা রাজতান্ত্রিক না গণতান্ত্রিক ছিল সে বিষয়ে বিতর্ক আছে। প্রসঙ্গত ঐতিহাসিক এ. এল. ব্যাসাম এই সভ্যতার রক্ষণশীল চরিত্রের কথা উল্লেখ করেছেন।

আরও জানুন:
Previous Post Next Post

نموذج الاتصال