একনজরে বৈদিক সভ্যতা
বৈদিক সভ্যতার স্রষ্টা: আর্যরা
আর্যদের আদি বসতি: মধ্য এশিয়া অথবা ইউরোপ।
আর্যদের ভারতে প্রথম বসতি: পাঞ্জাব।
রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভিত্তি: পরিবার—গ্রাম—বিশ।
জনপ্রতিনিধি: সভা ও সমিতি।
বর্ণপ্রথা: ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র।
জীবন ভাগ: ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস।
আর্যদের প্রাচীনতম গ্রন্থ: বেদ।
বৈদিক-সাহিত্য: সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ বা বেদান্ত।
বৈদিক সভ্যতা প্রশ্ন উত্তর
১. বৈদিক সভ্যতা ভারতের কোন প্রাক্ ইতিহাসযুগের সভ্যতার নিদর্শন ছিল?
উত্তর: বৈদিক সভ্যতা ছিল লৌহযুগের সমসাময়িক সভ্যতা।
২. বৈদিক সভ্যতা কি?
উত্তর: বেদকে ভিত্তি করে যে সভ্যতা গড়ে ওঠে তাই বৈদিক সভ্যতা।
৩. বৈদিক সভ্যতার স্রষ্টা কারা?
উত্তর: আর্যরা।
৪. প্রাচীন ভারতে কারা আর্যরা নামে পরিচিত?
উত্তর: আর্যরা ছিল ভারতের বহিরাগত দীর্ঘকায় গৌরবর্ণ ও সুদর্শন এক জাতি — যাদের আদি বাসস্থান ছিল মধ্য-এশিয়া অথবা রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল কিংবা ইউরোপ মহাদেশের ইস্ট্রয়া, হাঙ্গেরি অথবা চেকোশ্লাভাকিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে।
৫. আর্যরা প্রথম কবে ভারতে আসে?
উত্তর: আনুমানিক ১,৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।
৬. আর্যরা ভারতে প্রথমে কোথায় বসতি স্থাপন করে?
উত্তর: উত্তর ভারতের সিন্ধু নদীর পাঁচটি উপনদী, সরস্বতী এবং উচ্চ গাঙ্গেয় উপত্যকার সপ্তসিন্ধু অঞ্চলে।
৭. বৈদিক আর্যদের প্রধান ভাষা কি ছিল?
উত্তর: সংস্কৃত।
৮. বৈদিক যুগে বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম কি ছিল?
উত্তর: গরু।
৯. বৈদিক যুগে প্রচলিত মুদ্রার নাম কি?
উত্তর: বৈদিক যুগে প্রচলিত মুদ্রার নাম 'নিষ্ক' ও 'মনা'।
১০. আর্যদের স্বর্ণমুদ্রার নাম কি?
উত্তর: নিষ্ক।
১১. আর্যদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম কি?
উত্তর: বেদ।
১২. ভারতের প্রাচীনতম সাহিত্য কোনটি?
উত্তর: বেদ।
১৩. বেদের অপর নাম কি?
উত্তর: শ্রুতি।
১৪. কিভাবে বেদ কথাটির উৎপত্তি হয়?
উত্তর: 'বিদ' শব্দ থেকে বেদ কথাটির উৎপত্তি — এর অর্থ জ্ঞান।
১৫. কবে বেদ রচনা করা হয়?
উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০—১০০০ অব্দের মধ্যে বেদ রচনা করা হয় বলে অনুমান করা হয়ে থাকে।
১৬. বেদের কয়টি ভাগ আছে?
উত্তর: চারটি, যথা — ঋক্, সাম, যজু এবং অথর্ব।
১৭. প্রত্যেক বেদের কয়টি অংশ ও কি কি?
উত্তর: প্রত্যেক বেদের চারটি অংশ, যথা — সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক এবং উপনিষদ বা বেদান্ত।
১৮. বৈদিক যুগের প্রধান উপাস্য দেবতা কারা ছিলেন?
উত্তর: ঋক্ বৈদিক যুগের প্রধান উপাস্য দেবতা ছিলেন পৃথিবী, মরুৎ, রুদ্র, অগ্নি, ঊষা, ইন্দ্র, সূর্য প্রভৃতি।
১৯. ঋক্ বৈদিক যুগের প্রধান দেবতার নাম কি?
উত্তর: অগ্নি।
২০. বৈদিক যুগের প্রাচীনতম গ্রন্থ কোনটি?
উত্তর: ঋকবেদ।
২১. ঋকবেদে 'বলি' শব্দটি কি অর্থে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: 'কর' নেওয়া অর্থে।
২২. 'দশরাজার যুদ্ধ' কাহিনী কোথায় লিপিবদ্ধ আছে?
উত্তর: ঋকবেদে।
২৩. বৈদিক যুগের কয়েকজন বিদুষী নারীর নাম লেখো।
উত্তর: অপালা, ঘোষা, মমতা, লোপামুদ্রা, গার্গী, মৈত্রেয়ী প্রভৃতি।
২৪. ঋক্ বৈদিক যুগের সমাজে কৃষক ছাড়াও অপর কয়েকটি বৃত্তিজীবী মানুষের নাম করো।
উত্তর: সূত্রধর, চর্মকার, ছুতোর, তাঁতি, কুমোর প্রভৃতি বৃত্তিজীবী মানুষ।
২৫. বৈদিক যুগের এমন দুটি জনসভার নাম করো যারা রাজশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত।
উত্তর: 'সভা' ও 'সমিতি'।
২৬. গৃহপতি বা কুলপা কাকে বলা হত?
উত্তর: বৈদিক যুগের কোনো পরিবারের কর্তাকে।
২৭. বৈদিক সাহিত্যের কোন অংশকে বেদান্ত বলা হয়?
উত্তর: উপনিষদ-কে।
২৮. উপনিষদ কি?
উত্তর: বেদের একটি অন্যতম দার্শনিক বিভাগ।
২৯. বেদের শেষ ভাগের নাম কি?
উত্তর: অথর্ব।
৩০. চতুর্বেদ ছাড়াও অপর একটি বৈদিক সাহিত্যের নাম করো।
উত্তর: বেদাঙ্গ।
৩১. পরবর্তী বৈদিক যুগের দুজন বিদুষী নারীর নাম করো।
উত্তর: মৈত্রেয়ী ও গার্গী।
৩২. পরবর্তী বৈদিক যুগে উদ্ভূত দুটি নগরের নাম লেখো।
উত্তর: হস্তিনাপুর ও কৌশাম্বী।
৩৩. প্রাচীন ভারতের কোন যুগে প্রথম 'গিল্ড' বা ব্যবসায়ী সংঘ গড়ে ওঠে?
উত্তর: পরবর্তী বৈদিক যুগে।
৩৪. বৈদিক যুগের শেষের দিকে ধনশালী বণিক শ্রেণিকে কি বলা হত?
উত্তর: 'শ্রেষ্ঠী' বা 'সেঠঠি'।
৩৫. গহপতি ও সেঠঠি বলতে কী বোঝো?
উত্তর: (i) বৈদিক পরবর্তীযুগে গ্রামাঞ্চলে 'গহপতি' নামে একটি অত্যন্ত বিত্তশালী কৃষক সম্প্রদায়ের উৎপত্তি হয়েছিল। গহপতিরা সাধারণত বৈশ্য শ্রেণিভুক্ত ছিল।
(ii) বৈদিক পরবর্তীযুগে বৈশ্য সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রভূত ধনশালী বণিক শ্রেণির উদ্ভব হয়, যারা 'শ্রেষ্ঠী' বা 'সেঠঠি' নামে পরিচিত ছিলেন।
৩৬. হরপ্পা সভ্যতার সঙ্গে বৈদিক সভ্যতার প্রধান পার্থক্য কি ছিল?
উত্তর: হরপ্পা সভ্যতার সঙ্গে বৈদিক সভ্যতার মূল পার্থক্য হল এই যে — হরপ্পা সভ্যতা ছিল নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা কিন্তু বৈদিক সভ্যতা ছিল গ্রামকেন্দ্রিক সভ্যতা। (বিস্তারিত জানুন...)
৩৭. আর্যদের চতুরাশ্রমের প্রথম আশ্রমের নাম কি?
উত্তর: আর্যদের চতুরাশ্রমের প্রথম আশ্রমের নাম ব্রহ্মচর্য।
৩৮. চতুরাশ্রমের সর্বশেষ আশ্রমের নাম কি?
উত্তর: সন্ন্যাসশ্রম।
৩৯. প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বৌদ্ধমহাসভা কোথায় আহূত হয়?
উত্তর: প্রথম বৌদ্ধমহাসভা — অজাতশত্রুর রাজত্বকালে রাজগৃহে
দ্বিতীয় বৌদ্ধমহাসভা — কালাশোকের রাজত্বকালে বৈশালীতে
তৃতীয় বৌদ্ধমহাসভা — অশোকের রাজত্বকালে পাটলিপুত্রে
৪০. ত্রিপিটক কি? অথবা, বৌদ্ধদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম কি? এটি কোন ভাষায় লেখা?
উত্তর: ত্রিপিটক হল বৌদ্ধধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। এটি পালি ভাষায় লেখা। (বিস্তারিত জানুন...)
৪১. বৌদ্ধধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম কি?
উত্তর: ত্রিপিটক (বিনয় পিটক, সুত্ত পিটক ও অভিধর্ম্ম পিটক)।
৪২. বৌদ্ধধর্মে জাগিতক কামনা-বাসনার অবসানের জন্য কোন পথের সন্ধান দেওয়া হয়েছে?
উত্তর: অষ্টাঙ্গিক মার্গের। (বিস্তারিত জানুন...)
৪৩. অষ্টাঙ্গিক মার্গ এর অপর নাম কি?
উত্তর: মঝঝিম বা মধ্যপন্থা।
৪৪. জাতক কি?
উত্তর: বৌদ্ধ সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট গ্রন্থ, এতে গৌতমবুদ্ধের পূর্বজন্মের কাহিনী লিপিবদ্ধ রয়েছে।
৪৫. 'আর্যসত্য' সম্বন্ধে কে বলেছেন?
উত্তর: বুদ্ধদেব।
৪৬. কৈবল্যের অর্থ কি?
উত্তর: কৈবল্যের অর্থ হল পরম বা বিশুদ্ধ জ্ঞান, যা লাভ করলে সুখ-দুঃখ ও পঞ্চ রিপুকে জয় করা যায়।
৪৭. 'নিগম' কথার অর্থ কি?
উত্তর: বণিক সংঘ।
৪৮. তীর্থঙ্কর শব্দের অর্থ কি?
উত্তর: জৈনদের প্রধান ধর্মগুরু।
৪৯. সর্বপ্রথম তীর্থঙ্করের নাম কি?
উত্তর: ঋষভদেব বা আদিনাথ।
৫০. পার্শ্বনাথ কে ছিলেন?
অথবা, জৈনদের ২৩-তম তীর্থঙ্করের নাম কি?
উত্তর: জৈনদের ২৩-তম তীর্থঙ্কর ছিলেন পার্শ্বনাথ।
৫১. শেষ জৈন তীর্থঙ্কর কে ছিলেন?
অথবা, জৈনদের শেষ তীর্থঙ্কর কে?
উত্তর: মহাবীর (চব্বিশতম তীর্থঙ্কর)।
৫২. জৈন ধর্মের মূলনীতি কি?
উত্তর: অহিংসা।
৫৩. প্রথম জৈন শাস্ত্র গ্রন্থের নাম কি?
উত্তর: জৈন শ্রমন ভদ্রবাহু রচিত কল্পসূত্র।
৫৪. জৈনদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম কি?
উত্তর: দ্বাদশ অঙ্গ।
৫৫. জৈনদের দুটি প্রধান সম্প্রদায় কি কি?
উত্তর: শ্বেতাম্বর ও দিগম্বর।
৫৬. পার্শ্বনাথ প্রচারিত চতুর্যামের সাথে মহাবীর কোন নতুন আদর্শ যোগ করেন?
উত্তর: পার্শ্বনাথ প্রচারিত চতুর্যামের সাথে মহাবীর অন্যতম আদর্শ হিসাবে শুচিতা বা ব্রহ্মচর্য আদর্শ যোগ করেন।
আরও পড়ুন: