বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য

বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য

প্রাচীন ভারতের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ইতিহাসে বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক ছিলেন গৌতমবুদ্ধ বা বুদ্ধদেব এবং জৈনধর্মের প্রবর্তক ছিলেন মহাবীর। এই দুই ধর্মের মধ্যে কিছু মিল বা সাদৃশ্য লক্ষ্য করা গেলেও আবার কিছু অমিল বা বৈসাদৃশ্যও দেখা যায়। আজ আমরা বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের মধ্যেকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য বা পার্থক্যগুলি আলোচনা করবো।
বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য
বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের মধ্যে মিল ও অমিল

বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের মধ্যে সাদৃশ্য

বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য দেখা যায়, যেমন — 
(i) প্রায় একই সময়ে (খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে) উভয় ধর্মমতের উদ্ভব ঘটেছিল। 
(ii) উভয় ধর্মই ছিল প্রতিবাদী, ব্রাহ্মণ্য প্রাধান্য ও জাতিভেদ প্রথার বিরোধী। 
(iii) উভয় ধর্মই ছিল ক্ষত্রিয় রাজকুমার দ্বারা প্রবর্তিত, অহিংসা নীতিতে বিশ্বাসী, কর্মফল ও জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী এবং বেদ বিরোধী। 
(iv) বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্ম উভয় ধর্মমতই মানুষকে তার কর্মফলের হাত থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করে। 
(v) বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্ম — উভয় ধর্মেই অহিংসা নীতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। 
(vi) দুই ধর্মই কর্মফল ও জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী এবং জাতিভেদ প্রথা ও অন্যান্য বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠানের বিরোধী। 

বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের মধ্যে বৈসাদৃশ্য বা পার্থক্য

বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের মধ্যে যেমন কিছু সাদৃশ্য রয়েছে, তেমনি আবার কিছু বৈসাদৃশ্যও রয়েছে। বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্মের মধ্যেকার বৈসাদৃশ্য বা পার্থক্য গুলি হল —
বৌদ্ধ ধর্ম জৈন ধর্ম
১. বৌদ্ধগণ মধ্যপন্থায় বিশ্বাসী। ১. জৈনরা কঠোর কৃচ্ছসাধন ও তপশ্চর্যায় বিশ্বাসী।
২. অহিংসা সম্পর্কে বৌদ্ধরা ততটা কঠোর নন। ২. অহিংসা সম্পর্কে জৈনগণ চরমপন্থী।
৩. বৌদ্ধধর্মে সংঘ অপরিহার্য। ৩. জৈনধর্মে সংঘ অপরিহার্য নয়।
৪. বৌদ্ধরা ব্রাহ্মণ্য মতবাদ ও রাজনীতিকে পুরোপুরি অস্বীকার করেন। ৪. জৈনরা ব্রাহ্মণ্য মতবাদ ও রাজনীতি কিছুটা মানেন।
৫. বৌদ্ধধর্ম অচেতন পদার্থের মধ্যে প্রাণের অস্তিত্ব তত্ত্বে বিশ্বাসী নয়। ৫. জৈনধর্মে বিশ্বাস করা হয় যে, যাবতীয় অচেতন পদার্থের মধ্যেও প্রাণ আছে।
৬. বৌদ্ধরা হীনযান ও মহাযান — এই দুটি প্রধান সম্প্রদায়ে বিভক্ত। ৬. জৈনরা দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর — এই দুই সম্প্রদায়ে বিভক্ত।

আরও পড়ুন:

2 Comments

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال