প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় মুদ্রার গুরুত্ব

ইতিহাস রচনার জন্য সাহিত্যের তুলনায় প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা — (i) লিপি, (ii) স্থাপত্য ও ভাস্কর্য এবং (iii) মুদ্রা। আজ আমরা প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় মুদ্রার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করব।
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় মুদ্রার গুরুত্ব

প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় মুদ্রার গুরুত্ব:

ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলির মধ্যে মুদ্রার গুরুত্ব অপরিসীম। সাহিত্য ও লিপি থেকে যেসব তথ্য সংগ্রহ করা যায়, তার সত্যতা যাচাই করার জন্য মুদ্রার বিশেষ উপযোগিতা রয়েছে। প্রাচীন ভারতে 'নিষ্ক’ বা 'মনা’ নামে মুদ্রা ব্যবহৃত হলেও গ্রিক, শক, কুষাণ, পাল, প্রতিহার ও রাষ্ট্রকূট বংশের আমলেই মুদ্রার প্রচলন বেশি ঘটে। প্রাচীনকালের ভারতীয় মুদ্রাগুলি সাধারণত সোনা, রুপা, তামা, ব্রোঞ্জ, সিসা এমনকি মাটি পুড়িয়েও তৈরি করা হত। গ্রিক আক্রমণের পর থেকেই ভারতে রাজার নাম খোদাই করা মুদ্রা ব্যবহারের প্রচলন হয়।

          প্রাচীন মুদ্রা থেকে কোনো রাজ্যের রাজার নাম, সাল, তারিখ, তৎকালীন সময়ের রাজনৈতিক, আর্থিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস, রাজ্যের ভৌগোলিক সীমা, ধর্মবিশ্বাস, সামাজিক অবস্থা, বৈদেশিক বাণিজ্য প্রভৃতি সম্পর্কে নানান তথ্য নির্ভুলভাবে জানা যায়। এমনকি প্রাচীন মুদ্রা থেকে রাজ্যটি রাজতান্ত্রিক কিংবা প্রজাতান্ত্রিক (যেমন শক ও পল্লব যুগ) সে বিষয়েও তথ্য পাওয়া যায়। কোনো কোনো মুদ্রায় অঙ্কিত ছবি থেকে সেই রাজার ব্যক্তিগত গুণাবলির প্রতিফলন পাওয়া যায়।

[১] মুদ্রার রাজনৈতিক গুরুত্ব: প্রাচীন ভারতে এমন অনেক শাসক ছিলেন যাদের অস্তিত্বের কথা কেবলমাত্র মুদ্রা থেকেই জানা যায়। উদাহরণ স্বরূপ ব্যাকটিয় গ্রিক রাজাদের কথা বলা যায়। মুদ্রা থেকে প্রায় ত্রিশ জন ব্যাকটিয় গ্রিক শাসকের নাম পাওয়া গেছে। এমনকি মুদ্রা থেকে রাজতন্ত্র ও প্রজাতান্ত্রিক (শক ও পল্লব যুগ) রাজ্য সম্পর্কীত তথ্যও পাওয়া যায়।

[২] মুদ্রার ধর্ম ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব: কোনো কোনো মুদ্রায় অঙ্কিত ছবি থেকে সেই রাজার ধর্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিগত গুণাবলির প্রতিফলন পাওয়া যায়। দৃষ্টান্ত হিসেবে কুষাণ বংশীয় রাজাদের মুদ্রায় অঙ্কিত বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি থেকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের কথা জানা যায়। সমুদ্রগুপ্তের বীণাবাদন মূর্তি থেকে তাঁর সংগীতপ্রীতির পরিচয় পাওয়া যায়। প্রাচীন মুদ্রার ওপর অঙ্কিত বিভিন্ন চিত্র থেকে সমসাময়িক কালের পোশাক পরিচ্ছদ, অস্ত্রশস্ত্র, অলংকার ও শিল্পনৈপুণ্যের পরিচয় মেলে।

[৩] মুদ্রার অর্থনৈতিক গুরুত্ব: মুদ্রা থেকে কোনো একটি নির্দিষ্ট যুগের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা জানা যায়। উন্নতমানের মুদ্রা যেমন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষণ, তেমনি হীনমানের মুদ্রা অর্থনৈতিক অবনতির পরিচায়ক। মুদ্রা থেকে বাণিজ্যিক লেনদেনের কথা জানা যায়। কুষাণ, শক ও সাতবাহন আমলে রোম তথা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতবর্ষের যে বাণিজ্যিক যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল তা এদেশে প্রাপ্ত অসংখ্য রোমান মুদ্রা থেকে জানা যায়।

উপসংহার:
মুদ্রা সংক্রান্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের যে-কোনো দিক সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে মুদ্রার সমস্ত দিক বিচার বিবেচনা করা একান্ত জরুরি, মুদ্রা হল এক ধরনের ঐতিহাসিক দলিল।
__________

Similar Question:

  • প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় মুদ্রার গুরুত্ব আলোচনা করো।
  • প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে মুদ্রার গুরুত্ব নির্ণয় করো।
  • প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে মুদ্রার গুরুত্ব উল্লেখ করো।
  • প্রাচীন ভারতের ইতিহাস পুনর্গঠনে মুদ্রার গুরুত্ব কতটা?

আরও পড়ুন:

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال